
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি ব্যবহার যেনও জীবনের স্পন্দনের মতই একই সূত্রে গাঁথা।বিশ্বকে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ (রোগমুক্ত) প্রজন্ম প্রতিদানের প্রতিশ্রুতিতে প্রতিবছর ১৬ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব খাদ্য দিবস ।এ বছরের খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃকাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন।’আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ। বৈশ্বিক খাদ্যপুষ্টির মান উন্নয়ন বিবেচনায় এই প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত সময়পোযোগী।
প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তির ব্যবহার এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব ঘটিয়েছে।নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রকমের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা।এসব গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন করে চলছে নিত্যনতুন সব রোগমুক্ত,লবণাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহনশীল জাতের ফসল যা আমাদের খাদ্য ও পুষ্টি উপাদানের (জিংক, আয়রন, প্রোটিন, মিনারেল, ভিটামিন) সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে। এছাড়াও ট্রান্সজেনিক জাতের ফসলগুলো জমিতে রোপনের ফলে এদের যেমন ফলনও হয়ে থাকে ব্যাপক ও তেমনি পুষ্টিগুনসমৃদ্ধ।
খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় আরেকটি চমকপ্রদ প্রযুক্তির নাম হচ্ছে জৈবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি।ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে বায়োটেকনোলজির বিকল্প নেই। ফসলের ফলন বৃদ্ধি, কাক্সিক্ষত জাত উদ্ভাবন, পোকামাকড় রোগবালাই প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন, লবণাক্ততা সহ্য ক্ষমতার জাত, বন্যা-খরা-শৈত্যপ্রবাহ সহ্য ক্ষমতা জাত উদ্ভাবন, বড় আকৃতির ফলমূল, সবজি-মাছ-পশুপাখি উৎপাদন, অল্প সময়ে লাখ লাখ চারা উৎপাদন, চাহিদামত জাত উদ্ভাবনসহ কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির ভূমিকা অপরিসীম। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বায়োটেক ফসলই একমাত্র বিশ্বকে ক্ষুধামুক্ত করতে পারে এবং অর্গানিক ফার্মিং এ জৈবসার/জৈব কীটনাশক/ বায়োহার্বিসাইডস/ বায়োলজিক্যাল ফিড অ্যাডিটিভ/ মাইক্রোবিয়াল কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ (যেমন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, খামির) সবই জৈব প্রযুক্তির অংশ।যা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও,খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চত করার লক্ষ্যে কৃষি নীতিতে নতুন করে ন্যানো প্রযুক্তির মত আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে হারভেস্টর, ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মতো কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার নিয়েও।এসব প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনযাত্রার মানকে সমৃদ্ধ করবে তেমনি পূরণ করবে গুনগত পুষ্টির মানও।
তবে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় ও টেকসই খাদ্য গ্রহণে আমাদের নিজেদেরকেও আরও অনেকবেশি সচেতন হতে হবে।ব্র্যাকের একটা গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭৩ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ পুরুষ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছে না।এবং বাংলাদেশে এখনও দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ অর্থাৎ প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের পুষ্টিকর খাবার জোগাড়ের ক্ষমতা নেই। আর এসব কারণে এখনও ৩১ শতাংশ শিশুর শারীরিক বিকাশ ঠিকমত হচ্ছেনা।প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায় যে,প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ করে দিয়েছে তাই এর সঠিক ব্যবহার জানতে হবে এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি উপাদান গ্রহণে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
-----------------
রিয়াজ মুন্সি
সদস্য,
বশেমুরবিপ্রবি বিজ্ঞান ক্লাব
বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।।
Post a Comment
Post a Comment