"বেঁচে থাকার জন্য একটি মাত্র পৃথিবী"

মানুষ তার জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে গিয়ে অবলা প্রাণকে নিঃশেষে বিপন্ন করছে,জীবনের তাগিদে জীবন হচ্ছে বিপন্ন। সৌরজগৎ সৃষ্টির প্রায় ১০০ মিলিয়ন বছর পর একগুচ্ছ সংঘর্ষের ফল হলো আমাদের এই ধরণী, যাতে সায়ানোব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ থেকে আসে প্রথম অম্লজান। যারই পালাক্রমে নানা পরিবর্তন ও বিবর্তন এর মধ্যে থেকে আমাদের এই পৃথিবী আজকে আমাদের ধারণ করছে।

প্রাণের বিস্ফোরণ: ৬৫০ মিলিয়ন বছর আগে বায়ুমন্ডলে বৃদ্ধি পেতে থাকে অক্সিজেন এবং এ সময় বিভিন্ন প্রাণীর উদ্ভব হতে থাকে। এককোষী প্রাণীর পাশাপাশি এসে পরে বহুকোষী জীবন।

প্রাণী জগতের বিলুপ্তি: ২৫২ মিলিয়ন বছর আগে পারমিয়ান যুগে পৃথিবীর ইতিহাস সবচেয়ে বড় বিলুপ্তির ঘটনা ঘটে।মাত্র ৬০ হাজার বছর এর মাঝে প্রায় ৯০শতাংশ জীবের বিলুপ্ত ঘটে। ক্রেতেশ্বাস পিরিয়ডে বিলুপ্ত ঘটে ডাইনোসর সহ ৮৫%জীবের।

পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা : মানুষ তার নিজ আরাম ও সুখের জন্য প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ক্ষতি করে চলছে। জীবনের তাগিদে জীবন হচ্ছে বিপন্ন। মানুষ তার প্রয়োজন পূরণের স্বার্থে, উন্নয়ন এর স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে প্রকৃতির অবলা প্রাণীগুলোকে ভুলে যাচ্ছে। ফলে তাদের জীবন হয়ে পড়ছে শঙ্কটাপন্ন। পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রত্যেক প্রাণীই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু মানুষ নিজ স্বার্থ হাসিলে এই প্রাণী গুলোকে সুন্দর ভাবে বাঁচতে দেয় না। বৃক্ষনিধণের জন্য পাখি হারাচ্ছে তার খাদ্য ও আবাসস্থল। তৃণভোজীরা পড়ছে খাদ্যসংকটে। কলকারখানার বর্জ্য, প্লাস্টিক দূষিত করছে মাটি,পানিকে যার জন্য স্থলের বৃক্ষ ও জলের মাছ উভয়ই তাদের জীবনকে দিচ্ছে বলি। মানুষের স্বার্থে অন্নপ্রাণী কেন বলি দিবে সেটা যদি নির্বোধ মানুষ বুজতে পারতো তবে এই ধরণী হয়ে উঠতো পুলকিতময়। যেখানে বনের পর বন উজাড় হতো না, নদীর পর নদী হতো না মরণক্ষেত্র। মানুষের সচেতন হতেই হবে টা না হলে এই পৃথিবীর প্রাণীবিচিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। মানবজীবনের উন্নয়ণের পথ কখনো অবলা জীবের জীবনের মাধ্যমে তৈরী করা যাবে না।

রেইন ফরেস্টের দুর্দশা:ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গলকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আজ সেই ফুসফুস ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব পৃথিবীর সমস্ত দেহ ব্যথায় কাতরাচ্ছে। মানুষ অ্যামাজনের বৃক্ষ নিধন করে কারুকার্য মন্ডিত  আসবাবপত্র তৈরি করতে, বসবাসের স্থানকে করছে প্রীতিকর। এরই প্রভাবে পৃথিবী গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, CO2 বাড়ছে, সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। দেখে দিচ্ছে নিত্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ।এই দুর্যোগ এর আড়ালে লুকিয়ে থাকে মানবসমাজের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার ফসল বহন করা লাগে গোটা পৃথিবীর প্রাণীজগৎ কে।তাই আমাজন জঙ্গল হোক আর রাস্তার পাশের গড়েউঠা বৃক্ষরাশি হক সবাইকে যোগ্যসম্মান দিলেই পৃথিবী হবে সুখময়। একটি গাছ কাটলে আরও ২ টি গাছ লাগানোর মনমানসিকতার সৃষ্টি হলে আমাদের অস্তিত্ববিলীন হতে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।

সমস্যা উত্তোলন : মানুষ যতই প্রকৃতিকে শাসন করার চেষ্টা করুক, তা কখনো সম্ভব না।প্রকৃতি প্রতিটি বিষয়ের প্রতি যত্নশীল হলে আমাদের পৃথিবী সবার জন্য বাস যোগ্য হবে।প্রত্যেক প্রাণী ও জীবের গুরুত্ব বুজে তাদের রক্ষা ও বৃদ্ধিতে মানবসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। মানব তার বুদ্ধির সঠিক ও সৎ ব্যবহার করতে পারলে পৃথিবী হবে সুখময়। কলকারখানার বর্জ্য সংরক্ষণ ও পরিষেধন করলে, বা বায়োপলিথিন ব্যবহার করলে, প্লাস্টিক রিসাইকেল করলে, বায়োফুয়েল ব্যবহার বাড়ালে পৃথিবীতে অনেক জীব প্রাণ খুলে বিচরণ করতে পারবে।আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে প্রকৃতি ও বৃক্ষের গুরুত্বকে উপলদ্ধি করা শিখতে হবে।প্রত্যেক মানুষ যদি বৃক্ষ রোপনে মনোযোগী হয়, বিজ্ঞানের নিত্য আধুনিক প্রযুক্তি গুলাকে জীবন বাঁচানোর কাজে ব্যবহার করা যায় তবে আমাদের ধরণী হয়ে উঠবে বাসযোগ্য। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে ২০০০০ ফুটবল মাঠের সমান একটি বৃক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে যার নাম THE SEAGRASS (রিবন উইড)  [ সোর্স: রয়েল সোসাইটি বি জার্নাল ]

এটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো গাছ যার জীবন রহস্য উন্মোচন হলে হয়তো নতুন কিছু আবিষ্কার হবে যা মানবসভ্যতা তাকে আরও অনেক কিছুই উপহার দিবে। পৃথিবীর বুকে টিকে থাকা অতিবিপন্ন জীবগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায় সৃষ্টির পরিক্রমায় প্রাণীকুলের সবচেয়ে উন্নত ও বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব যে সৃষ্টির অন্য প্রাণীর যত্ন নেয়া। জীবনের উন্নয়নের তাগিদে জীবনকে কখনো সংকটে ফেলা যাবে না। মানব সমাজই পারে তার বিবেক ও বুদ্ধি দিয়ে এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় এখনো পৃথিবীর মত কোনো গ্রহ আবিষ্কার হয়নি। পৃথিবীই একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ। তাই পৃথিবীকে আমাদের বাসযোগ্য হিসেবে বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। আর এই দায়িত্ব পালন করা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। নাহয় আমরা সেই অবলা প্রাণীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার জন্য অপরাধী হয়ে থাকবো।

-------------------

Shakibul Alam Nirjon

Member, 

BSMRSTU Science Club

Dept: Biochemistry and Molecular Biology (BMB), BSMRSTU